ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রমনা পার্ক, বাংলাদেশের রাজধানীর একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শোভায় সমৃদ্ধ নয়, বরং এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ঢাকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি বিশাল অংশ। রমনা পার্কটি স্থাপিত হয়েছিল ১৬১০ সালে, মোঘল আমলে, এবং তার পর থেকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। আজও এটি ঢাকা শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার এক উত্তম স্থান হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাসের এক অধ্যায়: রমনা পার্কের প্রেক্ষাপট
রমনা পার্কের ইতিহাস প্রাচীন। এটি মূলত মোঘল আমলে একটি রাজকীয় বাগান হিসেবে পরিচিত ছিল এবং পরে একে আধুনিকভাবে তৈরি করা হয়। এর আগের বিস্তৃতি ছিল পুরানো হাইকোর্ট ভবন থেকে বর্তমান সড়ক ভবন পর্যন্ত, তবে বর্তমানে এটি ৬৮.৫০ একর এলাকায় বিস্তৃত।
এটি শুধু ঢাকা শহরের মানুষদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক জায়গা নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে থাকে। রমনা পার্কে বছরে একাধিক সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, যা ছায়ানটের আয়োজনে বটমূলে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য: রমনা পার্কের উদ্ভিদ ও লেক
রমনা পার্কে প্রায় ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অগণিত লতাগুল্ম, ছোট-বড় বৃক্ষ, পাদাউক, কেয়া, কৃষ্ণচূড়া, সহ নানা মৌসুমী ফুল। ঢাকা শহরের কংক্রিট জঙ্গলে এমনসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া সত্যিই একটি বিরল অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে লেকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যার দৈর্ঘ্য ৮১২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ থেকে ৯৪ মিটার। এই লেকের আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করা, জলের মধ্যে হালকা হাওয়ার অনুভূতি, প্রকৃতির মাঝে এক আশ্চর্য শান্তি এনে দেয়।
রমনা পার্কে যাওয়ার উপায়
রমনা পার্কে পৌঁছানো অত্যন্ত সহজ। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি, ট্যাক্সি অথবা বাসে শাহবাগ এসে শিশুপার্ক অতিক্রম করে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই রমনা পার্কের প্রবেশ পথ দেখতে পাবেন। এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রের কাছে অবস্থিত, তাই ভ্রমণের জন্য এটি খুবই সুবিধাজনক।
কোথায় থাকবেন?
রমনা পার্কের কাছাকাছি থাকা যায় নানা মানের আবাসিক হোটেলে। ৫ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ মানের হোটেলও এখানে রয়েছে। কিছু প্রধান ৫ তারকা হোটেল হল: প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ, হোটেল লা মেরিডিয়েন, এবং র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন। এছাড়া, বাজেট হোটেলগুলিও রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সহজে পাওয়া যায়, যেমন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ফকিরাপুল, পল্টন, গুলিস্তান, এবং পুরান ঢাকা।
রমনা পার্কের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
রমনা পার্ক শুধু একটি প্রাকৃতিক উদ্যানই নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পহেলা বৈশাখের দিন রমনা পার্কে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়, তা পুরো ঢাকাকে মাতিয়ে তোলে। এখানে শিল্পীরা গান গায়, নৃত্য পরিবেশন করে এবং হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে নতুন বছরের আগমন উদযাপন করে। এটি একটি আবেগময় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
রমনা পার্কে কাটানো সময়
রমনা পার্কে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। সকালে পার্কে ঘুরে বেড়ানো, প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সময় কাটানো, অথবা লেকের পাশে বসে থাকা—সব কিছুই একরকমের প্রশান্তি নিয়ে আসে। বিশেষ করে যাদের মনোযোগ প্রকৃতি, পরিবেশ এবং শান্তির দিকে, তাদের জন্য রমনা পার্ক এক আদর্শ স্থান।
উপসংহার
রমনা পার্ক ঢাকা শহরের একটি অমূল্য রত্ন। এটি শুধু একটি উদ্যান নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। যারা ঢাকা শহরে বসবাস করেন বা এখানে পর্যটক হিসেবে আসেন, তাদের জন্য রমনা পার্কে একবার হলেও যাওয়ার অভিজ্ঞতা অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এখানে প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির সান্নিধ্য, ঐতিহ্য ও শান্তির মেলবন্ধন ঘটতে থাকে, যা শহরের কোলাহল থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।